ভুয়া এনজিওর কর্মকর্তা সাজিয়ে আন্তর্জাতিক সভা–সেমিনারে যোগ দেওয়ার কাগজ সংগ্রহ করে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানিসহ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লোক পাঠাত একটি প্রতারক চক্র। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে এই চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, প্রায় এক যুগ ধরে এভাবে মানব পাচার করছে এই চক্র। এভাবে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান, ইতালি, দুবাই, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে ২০ জনের মতো ব্যক্তিকে পাচার করেছে তারা।
এই চক্রের নেতৃত্বে আছেন আবুল কালাম শেখ (৫৫)। তিনি ‘কথক একাডেমি’ নামে ভুয়া এনজিও পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে আন্তর্জাতিক সভা–সেমিনারের আমন্ত্রণপত্র জোগাড় করতেন। তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভাষ্যমতে, ভারত থেকে পড়াশোনা করে আসা আবুল কালাম ইংরেজিতে খুব ভালো। তিনি নিজেই এই প্রক্রিয়ায় অবৈধভাবে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তির পক্ষে বিদেশে বিভিন্ন সংগঠনের কাছে ইংরেজিতে মেইল লিখতেন। আমন্ত্রণপত্র এলে সব কাগজপত্র তৈরি করে ওই ব্যক্তিকে ভিসার জন্য দূতাবাসে পাঠাতেন।
এ রকম চার ব্যক্তিকে গত ১৫ মার্চ গুলশান থানায় সোপর্দ করে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস। তাঁরা ভিসার জন্য সাক্ষাৎকার দিতে গেলে কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সহকারী আঞ্চলিক নিরাপত্তা কর্মকর্তা মাইকেল লি তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে মামলা করেন। পরে ওই মামলার তদন্ত করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন দল। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান (অতিরিক্ত কমিশনার) হারুন অর রশীদ আজ সোমবার গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে কয়েকজন সাংবাদিকের কাছে এই প্রতারক চক্রের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
হারুন অর রশীদ জানান, দূতাবাসে আটক চার ব্যক্তি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে একটি সম্মেলনে যোগ দিতে কথক একাডেমি নামে ওই এনজিওর ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করেছিলেন। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার উদ্দেশ্যে দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দেন। সেই পাসপোর্টে নেপাল, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনেই, থাইল্যান্ড, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনামের সিল দেখা যায়। পরে দূতাবাস সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখে প্রতিটি সিলই জাল।
হারুন অর রশীদ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ইতিমধ্যে প্রতারক চক্রকে দুই লাখ টাকা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। আরেকজন বলেছেন ভিসা পেলে তাঁর ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল।
কথক একাডেমি নামে বাংলাদেশে নিবন্ধিত কোনো এনজিও নেই বলে জানান এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৩ এপ্রিল ঢাকা মহানগর ও এর আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই মানব পাচার চক্রের হোতা আবুল কালামকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুই সহযোগী বখতিয়ার হোসেন (৩৫), নজরুল ইসলামকে (৪৫) গ্রেপ্তার করা হয়। এই তিনজনের কাছ থেকে মোট ৩১টি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়। তিনজনই বর্তমানে কারাগারে আছেন।
হারুন অর রশীদ বলেন, আবুল কালাম শেখ কথক একাডেমি নামের ভুয়া এনজিওর আড়ালে ২০০৮ সাল থেকে এই প্রতারণা করে আসছিলেন। তিনি ও তাঁর সহযোগীরা বিভিন্ন উন্নত দেশে পাঠানোর জন্য লোকজনের সঙ্গে বড় অঙ্কের টাকার চুক্তি করতেন। পরে ওই ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠানের পরিচালকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বরত দেখিয়ে তাঁর জন্য আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণপত্র জোগাড় করতেন।

arham ahmed
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?
Sabbir Islam
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?
Sristy Hoque
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?