দীর্ঘায়ু পেতে কি খাবেন??
প্রায় প্রতিটি মানুষই দীর্ঘ জীবনযাপন করতে চায়।তবে দীর্ঘায়ুর মূল লক্ষ্য হলো মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা এবং সক্রিয় থাকা।স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, দৈনিক শারীরিক ব্যায়াম ও মনোচাপ থেকে মুক্তিতে আয়ু বাড়ে।এর বাইরে কিছু সুপারফুড আছে যার মাধ্যমে খুব সহজে স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায়।সুস্থ থাকতে ও দীর্ঘায়ু পেতে এসব সুপারফুড অনেক উপকারী।
সুস্থভাবে বাঁচতে নিয়মিত খাবারের সাথে রাখতে হবে এসব খাবারও।দেখে নেওয়া যাক, কী কী রয়েছে এই সুপারফুডের তালিকায়।
আয়ু বাড়ায় যেসব সুপারফুডঃ
১.বাদাম সুপারফুডের তালিকায় প্রথমেই যা আসে তা হল বাদাম, কারণ এতে থাকা পুষ্টিগুণ শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং স্বাস্থ্যকর বার্ধক্যের ক্ষেত্রে অনেক উপকারি। বাদামে ফাইবার, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং ওমেগা-৩, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম এবং সেলেনিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান রয়েছে।এসব উপাদান মানবদেহে প্রদাহ এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যের ভারসাম্য বজায় রাখার পাশাপাশি মস্তিষ্ক এবং হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।এ ছাড়া ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে যা দীর্ঘায়ু বৃদ্ধিতে সহায়ক।
২.অলিভ অয়েল অলিভ অয়েলে হার্ট সুস্বাস্থ্যকারী মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে।এ ছাড়া অলিভ অয়েলে পলিফেনল, শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা আলঝেইমারস, পারকিনসনস, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ এবং ক্যান্সারসহ বিভিন্ন বয়স-সম্পর্কিত অসুস্থতা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।এক গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন ১০ গ্রাম করে অলিভ অয়েল খাওয়া প্রাথমিক মৃত্যুঝুঁকি সাত ভাগ কমিয়ে দিতে পারে।
৩.সবুজ শাক গাঢ় সবুজ শাক নিয়মিত খেলে প্রাথমিক মৃত্যুর ঝুঁকি কমে এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারি হওয়া যায়।গাঢ় সবুজ পাতাযুক্ত শাক-সবজিতে জেক্সানথিন এবং লুটেইনও নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা চোখের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে।এ ছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত সবুজ পাতার ব্যবহার কার্ডিওভাসকুলার রোগের বিকাশ ১৫ ভাগ কমিয়ে দেয়।
৪.গোটা শস্যদানা গোটা শস্য যেমন বাদামী চাল, তুষ, ওটস, পপকর্ন, কুসকুস, কুইনো তাড়াতাড়ি মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।এসব খাবার উচ্চ ফাইবারে ভরপুর, যা মানবদেহে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল উৎপাদন কমিয়ে দেয়।এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে যারা প্রতিদিন তিনবার গোটা শস্য খান তাদের হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি ২৫ শতাংশ কমে যায় তাদের তুলনায় যারা এর চেয়ে কম খান।
৫.মটরশুটি উদ্ভিদ-ভিত্তিক সুপারফুড যেমন মটর, মটরশুটি, মসুর ডাল, শিমের বিচি ইত্যাদি লেগুম পরিবারের অংশ। এসব খাবারে চর্বি কম এবং প্রোটিন, ফোলেট, আয়রন, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম বেশি থাকে।ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন জার্নালে ক্রিটিকাল রিভিউতে প্রকাশিত একটি পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে মটরশুটি কার্ডিওভাসকুলার রোগ, ক্যান্সার এবং ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি হ্রাসের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।
৬.গ্রিন টি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পুষ্টিতে ভরপুর স্বাস্থ্যকর পানীয়র মধ্যে একটি গ্রিন টি।নিয়মিত গ্রিন টি সেবনে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।গ্রিন টি-তে উপস্থিত ক্যাটেচিন এটি মস্তিষ্কের রোগ নিরাময় করে।এটি নিউরনের উপর ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং আলঝেইমার থেকে রক্ষা করে।
৭.ফলমূল ভিটামিন সি, পটাসিয়াম এবং ফাইটোকেমিক্যালের মতো বিভিন্ন ধরনের ইমিউন-সাপোর্টিভ, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-বার্ধক্য বৈশিষ্ট্য বেশীরভাগ ফলেই পাওয়া যায়।বিশেষ করে বেরি জাতীয় ফলে শর্করা কম, ফাইবার বেশি এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় এগুলো মস্তিষ্ক এবং কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি।
৮.সামুদ্রিক মাছ স্যামন, টুনা এবং অন্যান্য চর্বিযুক্ত সামুদ্রিক মাছে অত্যাবশ্যক ওমেগা -৩, চর্বিহীন প্রোটিন, ভিটামিন-বি, সেলেনিয়াম এবং আয়রন রয়েছে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং আকস্মিক কার্ডিয়াক মৃত্যুর ঝুঁকি ৮০-৯০ শতাংশ কমাতে পারে।
৯.বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন মাত্র ২ আউন্সের বেশি সামুদিক মাছ খাওয়া আলঝেইমারে মৃত্যুর ঝুঁকি ৩৮% কমায়, ক্যান্সারে মৃত্যুর ঝুঁকি ২০% কমায় এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি ১৫-১৮% কমায়।
দীর্ঘায়ু পেতে কি খাবেন না??
মনে রাখতে হবে, অতিমাত্রায় যে কোনো খাদ্য উপাদান গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।জেনে নিন কোন ৮টি খাবার ক্ষতি করছে আপনার।
১.প্রক্রিয়াজাত মাংসঃ
এ ধরনের মাংসকে শুকিয়ে, লবণ ও নাইট্রিক এসিড দিয়ে সংরক্ষিত করা হয়, যেমন- সসেজ, বেকন, টিনজাত বা ধূমায়িত মাংস ইত্যাদি।২০১৩ সালে বাইয়োমেড সেন্ট্রাল এর গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে, যারা নিয়মিত প্রক্রিয়াজাত মাংস গ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ মানুষ উচ্চমাত্রার ক্যান্সার, ও হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং মৃত্যুমুখে ঢলে পরেন।এছাড়াও প্রক্রিয়াজাত মাংসে অতিরিক্ত লবণ থাকে, যার ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায় ও ডায়াবেটিসের সম্ভবনা তৈরি হয়।
২.কোমল পানীয়ঃ
কোমল পানীয়তে ৪৪ শতাংশের মতো চিনি থাকে।এই তরল পানে আয়ু কমে যাওয়ার মতো বিষয় না ঘটলেও, নানান শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন- ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাড় ক্ষয়, ওজন বৃদ্ধি।এছাড়াও গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অতিরিক্ত কোমল পানীয় পানে শরীরের স্থুলতা বেড়ে যায়, বিশেষ করে শিশুদের।তাই কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন।
৩.তেলে ভাজা খাবারঃ
প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া হয়।ক্লাসের বিরতিতে বা ক্লাস শেষে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ভাজাপোড়া খাবার খেতেই সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে।বর্তমানে বেশিরভাগ খাওয়াই তেলে ভাজা হয়।আলুর চিপস, পেঁয়াজের রিং, চিকেন ফ্রাই, চপ, বুট ভাজা ইত্যাদি।স্বাদু এই খাবারগুলো প্রিয় হলেও ধমনীর জন্য দারুণ ক্ষতিকর।এগুলো অতিমাত্রায় তেল ও ফ্যাট থাকে।ফলে কোলেস্টেরল জমে ধমনী বন্ধ হয়ে যায়।২০১৪ সালে অ্যামেরিকা সোসাইটির নিউট্রিশন জার্নাল গবেষণার তথ্য প্রকাশ করেছে, ঘন ঘন তেলে ভাজা খাবার খাওয়ার ফলে টাইপ-২ ডায়বেটিসের ঝুঁকি থাকে এবং কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ অতিরিক্ত হলে ক্যান্সারের সম্ভাবনা দেখা দেয়।তাই বেশি পরিমান ভাজাপোড়া পরিহার করতে হবে।
৪.ইন্সট্যান্ট নুডলসঃ
সারাদিন কাজ করে বাড়ি ফিরে অনেকেই রান্না করতে আগ্রহী হন না।আবার শরীরেও তেমন একটা শক্তি থাকেনা। তাই ক্ষুধা মিটাতে বেছে নেওয়া হয় ইন্সট্যান্ট নুডলস।কিন্তু বেশিদিন বেঁচে থাকতে চাইলে এটি খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে একদম।কারণ এটি প্রিজারভ করা হয়, কৃত্তিম রং ও ফ্লেভার দেওয়া হয় এবং বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়। এসব মিশ্রিত অবস্থায় মাসের পর মাস প্যাকেটজাত অবস্থায় সংরক্ষিত থাকে ইন্সট্যান্ট নুডলস।পাশপাশি এই খাদ্য উপাদানটি অতিমাত্রায় ক্যালরিযুক্ত ও সম্পূর্ণ পুষ্টিহীন।তাই স্বাস্থ্যের উপর এই নুডলস নানাভাবে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে দেয়।
৫.আইসক্রিমঃ
আইসক্রিমের নাম শুনলেই জিভে জল চলে আসে।ভাবনা শুরু হয়ে যায়, কোন ফ্লেভারের আইসক্রিম খাওয়া যায়। কিন্তু প্রিয় এই খাবারটি কি ক্ষতিকর? উত্তরট হচ্ছে হ্যাঁ, কারণ এটি তৈরি করতে প্রয়োজন হয় অনেক ধরণের স্বাদের রং, অতিমাত্রায় চিনি, ক্রিম বানাতে অধিক ফ্যাটের দুধ।এতে যে পরিমাণ দুধ ব্যবহার করা হয় তার জন্য কোলেস্টেরল ও চর্বি বেড়ে যায় অনেকখানি।ফলে ধমনীগুলো সরু হয়ে আসে ও হৃদরোগ দেখা দেয়।তাই শরীরের প্রতি যত্ন নিতে একেবারেই স্বল্পমাত্রায় আইসক্রিম খেতে হবে।
৬.ফ্রুট জুসঃ
ফ্রুট জুসকে স্বাস্থ্যকর বলা হয়।কিন্তু সত্যটি হচ্ছে, তা আদতে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে।প্যাকেট বা বোতলে পাস্তুরিত কিছু জুস রয়েছে যেগুলোতে লেখা থাকে ১০০% ফল থেকে তৈরি, যা আসলে কখনোই সত্য হয় না।বরং এতে রং, ফ্লেভারে, অতিমাত্রায় চিনি ব্যবহার করা হয়।এছাড়াও এগুলো যখন প্যাকেট করা হয় তখন অক্সিজেনের পরিমাণ কমতে থাকে, ফলে দীর্ঘদিন থাকলে জুসের স্বাদ হারিয়ে যায় এবং নষ্টও হয়ে যায়।অধিক মাত্রায় চিনি দেওয়ায় এতে ফ্যাটের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়।
৭.পিনাট বাটারঃ
পাউরুটি বা কুকিজের সাথে পিনাট বাটার খাওয়া হয়।এর স্বাদ মিষ্টি করে তৈরি করা হয়, যেন এটা খেতে সবাই পছন্দ করে।ফলে স্বাভাবিকভাবেই মিষ্টি স্বাদের জন্য চিনি মেশানো হয় এতে।আর এই চিনির ফলে শরীরে স্থুলতা বৃদ্ধি পায়, ওজন বেড়ে যায়।পিনাট বাটারের কিছু ফ্যাট উপকারী হলেও, সব ফ্যাট স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।তাই পিনাট বাটার খেলেও তা অধিক পরিমাণ ও নিয়মিত না খাওয়াই ভালো।
৮.ফ্রোজেন খাদ্যঃ
অনেকেই ফ্রোজেন খাবার খান নিয়মিত।সময় কম থাকায় বা চটজলদি নাশতার জন্য ফ্রোজেন খাওয়া কিনে থাকেন। তবে সমস্যা খাওয়া ফ্রোজেন করে রাখাতে না।সমস্যা হচ্ছে ফ্রোজেন খাবার সংরক্ষণে যেসব উপকরণ ব্যবহার করা হয় তাতে।এছাড়াও এতে রয়েছে অধিক সোডিয়াম ও কৃত্তিম ফ্লেভারের রং।এছাড়া এতে ভেজিটেবিল অয়েল দেয়া হয়, যাতে প্রচুর ফ্যাটি এসিড রয়েছে।সবকিছু মিলে শরীরে ডায়বেটিস ও হৃদরোগের প্রাদুর্ভাব তৈরি করে ফ্রোজেন খাবার।
#স্বাস্থ্য কথন#


arham ahmed
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?